রৈখিক গতি ও ঘূর্ণন গতির সাদৃশ্য

 পদার্থবিজ্ঞানে পরিপার্শ্বের সাপেক্ষে কোন বস্তু বা ভৌত ব্যবস্থার স্বীয় অবস্থান পরিবর্তনকে গতি (motion) বলা হয়। গাণিতিকভাবে একে সরণ, দূরত্ব, বেগ, ত্বরণ এবং দ্রুতির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। কোন বস্তুর গতিকে প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে পর্যবেক্ষণ করা হয়। যে কোন রাস্তা, পার্ক, পৃথিবীপৃষ্ঠ, সূর্য, ছায়াপথ, পর্যবেক্ষকের অবস্থান, কোন বিন্দু তথা যে কোন কিছুকে প্রসঙ্গ কাঠামো হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে বস্তুর অবস্থান পরিবর্তন পরিমাপের মাধ্যমে এর গতি পরিমাপ করা হয়। পক্ষান্তরে প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে বস্তু তার অবস্থান পরিবর্তন না করলে অর্থাৎ বস্তুটি স্থির থাকলে এই অবস্থাকে স্থিতি (rest) বলা হয়।

কোন বস্তুর গতি যদি একটি সরলরেখা বরাবর হয় তবে এ গতিকে রৈখিক গতি (linear motion) বলা হয়। বিস্তারিতভাবে বলা যায়, রৈখিক গতির ফলে গতিশীল বস্তুর মধ্যকার যে কোন দুটি বিন্দুর সংযোজক সরলরেখা সর্বদাই বস্তুটির গতিপথের সমান্তরালে অগ্রসর হবে। রৈখিক গতিকে চলন গতিও (translation motuon) বলা হয়। মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর গতি রৈখিক গতি।


সাধারণভাবে কোন বস্তু একটি স্থির বিন্দু বা অক্ষের সাপেক্ষে ঘুরতে থাকলে এর গতিকে ঘূর্ণন গতি বলা হয়। ঘূর্ণনরত দৃঢ় বস্তুর অভ্যন্তরীণ প্রতিটি বিন্দুর কৌণিক সরণের হার ঘূর্ণন বিন্দু বা অক্ষের সাপেক্ষে একই হয়। ঘূর্ণনরত দৃঢ় বস্তুর অভ্যন্তরীণ প্রতিটি বিন্দুর বৃত্তাকার গতির কেন্দ্রগুলো যে সরল রেখার উপর অবস্থান করে সে রেখাটিই বস্তুটির ঘূর্ণন অক্ষ। ঘূর্ণন অক্ষের অবস্থান বস্তুর মধ্যে বা বাইরে যে কোনখানে হতে পারে। বিশুদ্ধ ঘূর্ণন গতির ফলে বস্তুর কেবল কৌণিক সরণ ঘটে, রৈখিক সরণ ঘটে না। ঘূর্ণন গতির অপর নাম কৌণিক গতি (angular motion)। পৃথিবীর আহ্নিক গতি, ঘূর্ণায়মান চাকার আবর্তন গতি, চলন্ত পাখার ব্লেডের গতি হল ঘূর্ণন গতির উদাহরণ।

রৈখিক গতি ও ঘূর্ণন গতির রাশিগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সদৃশ থাকলেও এরা কিন্তু পরস্পরের সমান নয়। এসব রাশির সংজ্ঞা পরস্পর থেকে ভিন্ন। যেমন— রৈখিক ত্বরণ সৃষ্টিকারী ফ্যাক্টরটি হল বল পক্ষান্তরে কৌণিক ত্বরণ সৃষ্টির জন্য যা দায়ী তা হল টর্ক।

Catagories