ইকোলজিক্যাল সাকসেশন কাকে বলে
যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার
দ্বারা কোনো একটি অঞ্চলের উদ্ভিদ সম্প্রদায় সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তনের মাধ্যমে
অন্য কোনো নতুন উদ্ভিদ সম্প্রদায় দ্বারা পুনঃস্থাপিত হয়, তাকে ইকোলজিক্যাল সাকসেশন বলে। এর মাধ্যমে প্রতি টি প্রতিস্থাপিত উদ্ভিদ সম্প্রদায় পরবর্তি উদ্ভিদ
প্রজাতির বসবাসের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তণ
সাধন করে। এই পরিবর্তন টি একসময় আরো সুস্থির ও পরিনত পরিবেশের দিকে অগ্রসর হয়।
ইকোলজিক্যাল সাকসেশনের প্রাথমিক স্তরে কিছু প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট বাধার দরকার, যা সেই অঞ্চলের উপস্থিত
উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতিকে ধ্বংসের মাধ্যমে নতুন প্রজাতির বিকাশে সাহায্য করে।
যেমন – অগ্ন্যুৎপাত, শক্তিশালী ঘূর্নিঝড় ও অতিরিক্ত পশুচারণ, আগুন প্রভৃতি।
নতুন ভাবে সৃষ্ট
প্রাকৃতিক পরিবেশে কোন ধরণের উদ্ভিদ প্রজাতির সৃষ্টি হবে তা উক্ত অঞ্চলের কিছু পরিবেশ
গত উপাদানের উপর নির্ভর করে। যেমন – জলবায়ু, ভূ-প্রকৃতি ও ভূমিরূপ, মৃত্তিকা
প্রভৃতি।
ইকোলজিক্যাল সাকসেশনের পর্যায়
F.E
Clements (1916) এর মতে একটি নির্দিস্ট পরিবেশে উদ্ভিদ সম্প্রদায়ের সফলভাবে বাস্তুসংস্থানিক সাকসেশনের ৫ টি পর্যায় রয়েছে। যথা –
১. Nudation বা উন্মুক্তকরন – আগত নতুন প্রজাতির বসবাসের
উদ্দেশ্যে শূন্য বা উন্মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির পদ্ধতিকে উন্মুক্তকরন বা ন্যুডেশণ বলা
হয়।
ন্যুডেশণের কারণ – উপস্থিত উদ্ভিদ সম্প্রদায় অগ্ন্যুৎপাত, শক্তিশালী
ঘূর্নিঝড় ও অতিরিক্ত পশুচারণ, আগুন, মৃত্তিকা ক্ষয়, খরা, ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু
ঘটিত অসুখ প্রভৃতি কারণে বিলুপ্ত হয়ে নতুন প্রজাতির জন্য উন্মুক্ত পরিবেশের বিকাশ
ঘটায়।
২. Migration বা আগমন - অন্য অঞ্চল থেকে পাখি ও
বায়ুর দ্বারা উন্মুক্ত অঞ্চলে উদ্ভিদের বীজের আগমন।
৩. Ecesis বা প্রতিস্থাপন – এই পর্যায়ে আগত বীজ থেকে উন্মুক্ত অঞ্চলে উদ্ভিদ
সৃষ্টি হয় এবং তা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
৪. Reaction বা প্রতিক্রিয়া – এই পর্যায়ে উপস্থিত উদ্ভিদ গুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা
দেখা যায় এবং উদ্ভিদ গুলি স্থানীয় পরিবেশের সাথে আন্তঃ প্রতিক্রিয়া করতে শুরু করে
। এই ভাবে জীবন্ত জীব প্রজাতির দ্বারা আন্তঃ প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবেশের
পরিবর্তন সাধন কে Reaction বলে।
৫. Stabilization (Climax) বা স্থিতিকরন – একটি দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে পরিবেশের সাথে
ভারসাম্যের মাধ্যমে উদ্ভিদ সম্প্রদায় সমূহ অন্তিম পর্যায়ে এসে পৌছায়।
ইকোলজিক্যাল সাকসেশনের প্রকারভেদ
F.E
Clements (1916) বাস্তুসংস্থানিক ক্রমায়ন কে প্রধানত ২ টি ভাগে ভাগ করেন – যথা
১. প্রাইমারি সাকসেশন (Primary succession) – যে সব অঞ্চলে অতীতে কোনো উদ্ভিদ ও প্রানী
সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব ছিল না এমন অঞ্চলে উদ্ভিদ সম্প্রদায়ের ক্রমান্বয়িক বিকাশ কে
প্রাথমিক সাকসেশন বা উত্তরায়ন বলা হয়। প্রাথমিক উত্তরায়নে ফলে প্রথম যে উদ্ভিদের বিকাশ ঘটে
তাকে প্রাথমিক উদ্ভিদ /Pioneer plants বলে ।
যেমন – নতুন উত্থিত সমুদ্র তলদেশ, লাভা
শীতলীকরনের সৃষ্ট ভূমিরূপ, বরফের গলনের ফলে উন্মুক্ত স্থল ভাগ প্রভৃতি স্থান।
২. সেকেন্ডারি সাকসেশন (Secondary succession) – যে সব স্থানে আগে অতীতে কোনো উদ্ভিদ ও প্রানী সম্প্রদায়ের
অস্তিত্ব ছিল, কিন্তু বর্তমানে সি স্থান টি উন্মুক্ত বা খালি, সেখানে নতুন ভাবে নতুন
কোনো উদ্ভিদ প্রজাতির সৃষ্টি হলে, তাকে সেকেন্ডারি সাক্সেসন বলে।
যেমন – অগ্ন্যুৎপাত বা দাবানলের ফলে ধ্বংস হয়ে
যাওয়া স্থানে আবার নতুন প্রজাতির বিকাশ।
এছাড়া অন্যান্য প্রকারের উত্তরায়ন গুলি হল –
৩. অটোট্রপিক সাকসেশন (Autotrophic succession) : যে উত্তরায়ন বা ক্রমায়নে উদ্ভিদ প্রজাতি তথা
উৎপাদকের সংখ্যা প্রাণী প্রজাতি বা খাদকের থেকে বেশি, তাকে অটোট্রপিক সাক্সেসন বলে
৪. হেটারোট্রপিক সাকসেশন (Heterotrophic succession) - যে উত্তরায়ন বা ক্রমায়নে উদ্ভিদ প্রজাতির
থেকে প্রানী প্রজাতির প্রাধান্য দেখা যায়, তাকে হেটারোট্রপিক সাক্সেসন বলে।
৫. অটোজেনিক সাকসেশন (Autogenic succession) – কোনো বাসস্থানে উপস্থিত প্রজাতি ক্রমাগত অভ্যন্তরিন
পরিবেশের সাথে প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সেই পরিবেশের পরিবর্তন করতে থাকে, এই
পরিবর্তনের কারণে যখন উপস্থিত প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটে ও অন্য প্রজাতির বিকাশ ঘটে ,
তাকে অটোজেনিক সাক্সেসন বলে।
৬. অ্যালোজেনিক সাকসেশন (Allogeneic succession) – কোনো বাহ্যিক কারণে কোনো বাসস্থানের উপস্থিত
প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটে ও অন্য প্রজাতির বিকাশ ঘটলে, তাকে অ্যালোজেনিক সাক্সেসন বলে।
Sere - প্রাথমিক উদ্ভিদ যে পর্যায় গুলির মাধ্যমে অন্তিম বা ক্লাইমেক্স পর্যায়ে এসে পৌঁছায়, সেই পর্যায় গুলিকে Sere বলে।
তিনটি তত্ত্বের মাধ্যমে ক্লাইমাক্স ধারণাটি সুন্দর ভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব - যথা
ক) Mono Climax Theory by Clement
খ) Poly Climax Theory by A.G. Tansley (1935)
গ) Climax Pattern Theory by R.H.Whittaker (1935)